নিম প্রাচীনকাল থেকে আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে, ত্বকের যত্নে এক অসাধারণ প্রাকৃতিক উপাদান। এর পাতা, তেল, এবং ছাল বিভিন্ন ওষধি গুণাবলীর জন্য পরিচিত। নিম, ত্বকের যত্নে কীভাবে কাজ করে, নিম পাতা, তেল ও ছালে কি কি উপকারী যৌগ থাকে? এবং এটি কী কী সমস্যার সমাধান করতে পারে, জেনে নিন !
নিমের মধ্যে থাকা গুরুত্বপূর্ণ মলিকুল এবং তাদের ভূমিকা
নিমে কতগুলো সক্রিয় যৌগ বা active molecule রয়েছে যা ত্বকের যত্নে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। মজার কথা হল এসমস্ত যৌগ গুলোর বেশিরভাগ নিম গাছের রেচন প্রক্রিয়ার ফলে উত্পন্ন হয় ! যেমন :
1. আজাডিরাকটিন (Azadirachtin): এটি একটি প্রাকৃতিক কীটনাশক যা ত্বকের ব্যাকটেরিয়াল এবং ফাঙ্গাল ইনফেকশন রোধ করতে সহায়ক।
2. নিম্বিন (Nimbin): নিম্বিন অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি এবং অ্যান্টি-পাইরেটিক (জ্বর কমানো) বৈশিষ্ট্যযুক্ত। এটি ত্বকের প্রদাহ এবং লালচেভাব কমাতে সাহায্য করে।
3. নিম্বিডিন (Nimbidin): এই মলিকুলটি অ্যান্টি-সেপটিক এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন, যা ত্বকের ইনফেকশন প্রতিরোধ করে এবং ক্ষত দ্রুত সারাতে সহায়ক।
4. কুয়ার্সিটিন (Quercetin): এটি একটি প্রাকৃতিক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যা ত্বকের কোষের ক্ষতি রোধ করে এবং বার্ধক্যের লক্ষণ কমায়।
5. ফ্ল্যাভোনয়েডস (Flavonoids): ত্বকের স্বাস্থ্য রক্ষায় ফ্ল্যাভোনয়েডস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এগুলো ত্বকের ভিতর রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে।
6. ভিটামিন ই এবং ফ্যাটি অ্যাসিড: নিম তেলে থাকা ভিটামিন ই এবং ফ্যাটি অ্যাসিড ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করে এবং শুষ্ক ত্বকের সমস্যা কমায়।
নিম ত্বকের জন্য কীভাবে কাজ করে?
নিমে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টি-ফাঙ্গাল, এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য থাকার ফলে ত্বকের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে নিম গাছের বিভিন্ন অংশ দারুন কার্যকর।
1. অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল কার্যকারিতা: নিমে থাকা অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান ত্বকের ব্রণ বা acne এর চিকিত্সায় কার্যকর। এটি ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি রোধ করে এবং ত্বককে পরিষ্কার রাখে।
2. ডিপ ক্লিনজিং: নিমের পাতার পেস্ট বা নিমের তেল ত্বকের গভীরে জমে থাকা ময়লা এবং মৃত কোষ দূর করে। এটি ত্বকের ছিদ্র মুক্ত রাখতে সহায়ক।
3. ইনফ্ল্যামেশন কমানো: নিমে থাকা প্রাকৃতিক উপাদান ত্বকের লালচেভাব এবং ফোলা কমাতে সহায়তা করে। এটি সংবেদনশীল ত্বকের জন্য বিশেষভাবে কার্যকর।
4. ফাঙ্গাল ইনফেকশন প্রতিরোধ: নিমের অ্যান্টি-ফাঙ্গাল গুণাবলী ত্বকের ফাঙ্গাল ইনফেকশন, যেমন রিংওয়ার্ম এবং ফুট ইনফেকশন প্রতিরোধে সাহায্য করে।
5. প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার: নিমের তেল ত্বককে প্রাকৃতিকভাবে ময়েশ্চারাইজ করে, শুষ্ক ত্বকের সমস্যা কমায় এবং ত্বককে নরম ও মসৃণ রাখে।
নিমের ব্যবহার : অর্গানিক স্কিন কেয়ার
1. ব্রণের চিকিৎসায়: নিমের পাতা বেটে সরাসরি ব্রণের উপর লাগানো যেতে পারে। এটি দ্রুত ব্রণের প্রদাহ কমায়।
2. মাস্ক হিসেবে: নিম গুঁড়ো, মুলতানি মাটি, গোলাপজল, টার্মারিক বা হলুদ, অশ্বগন্ধা, ডালের গুঁড়া, অর্জুন ছালের গুঁড়া, অরেঞ্জ পিল, ঘৃতকুমারী (aloevera) চূর্ণ ইত্যাদি মিশিয়ে একটি ফেস প্যাক তৈরি করুন। এটি ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে, দাগ ছোপ কমাতে, ইনফেকশন দূর করতে, ব্রণর চিকিত্সায় দারুনভাবে সাহায্য করে। “ভেষজ- বাংলার গ্রামের জিনিস” এর খাঁটি নিম টার্মারিক ফেস প্যাকে নিমের সঙ্গে এরকম প্রায় 25 টি অন্যান্য ভেষজ উপাদান মেশানো হয় !
3. টোনার হিসেবে: নিম পাতা জলে ফুটিয়ে ঠান্ডা করে সেই জল টোনার হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এটি ত্বকের অতিরিক্ত তেল নিয়ন্ত্রণ করে।
4. ত্বকের ফাঙ্গাল ইনফেকশনের জন্য: নিম তেল সরাসরি আক্রান্ত স্থানে লাগালে দ্রুত উপশম পাওয়া যায়।
5. চুলের যত্নে: চুল পড়া কমাতে নিম তেল মাথার ত্বকে ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি খুশকি দূর করতেও কার্যকর। “ভেষজ” -এর মেথি নিম হেয়ার অয়েলে টাটকা নিমের নির্যাস ব্যবহার করা হয় !
নিম একটি বহুগুণ সম্পন্ন প্রাকৃতিক উপাদান যা ত্বকের যত্নে অমূল্য। এটি ব্রণ থেকে শুরু করে ফাঙ্গাল ইনফেকশন পর্যন্ত বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে কাজ করে। নিমের মধ্যে থাকা সক্রিয় মলিকুলগুলোর বৈশিষ্ট্য ত্বকের জন্য নিরাপদ এবং কার্যকর। এই উপাদানটি দৈনন্দিন ত্বকের যত্নের অংশ হিসেবে ব্যবহার করে আপনি পেতে পারেন সুস্থ, উজ্জ্বল ত্বক।
Comments